আজ শুক্রবার, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সরকারি ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সদের ঔষুধ চুরি!

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ

নারায়ণগঞ্জের স্বাস্থ্য খাতের কলঙ্ক বেরিয়ে আসছে দৈনিক সংবাদচর্চার বিশেষ অনুসন্ধান প্রতিবেদনে। নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যা খানপুর হাসপাতাল থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের স্থির চিত্রগুলো যেন নিজে নিজেই কথা বলে। কি হচ্ছে না এ সকল সরকারি হাসপাতালগুলোতে। বর্তমান প্রেক্ষপট অনুযায়ী বিশ্লেষন করলে নারায়ণগঞ্জের এ সকল সরকারি হাসপাতালগুলো যেন প্রকৃতপক্ষে হাসপাতাল নয়, এগুলো একেকটি সোনার ডিম পাড়া হাঁস নয়তো সোনার হরিণ। হাসপাতালগুলোর ভঙ্গুর দশা দেখে মনে হয় দেখার যেন কেউ নেই!

গত ৫ মে (রবিবার) নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে দৈনিক সংবাদচর্চা পত্রিকার একটি অনুসন্ধানকারী দল প্রথমে রোগী সেজে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে থেকে সরকারি ঔষুধ সরবরাহ করার জন্য একটি টোকেন নেয়, টোকেনটিতে সাধারণ জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল ও গ্যাস জনিত সমস্যার জন্য ঔষুধের নাম উল্লেখ ছিলো। অনুসন্ধানী দল ঔষুধ সরবরাহ কক্ষে টোকেনটি দিলে কর্তব্যরত একজন শুধু মাত্র প্যারাসিটামল ট্যাবলেট প্রদান করে এবং গ্যাসটিকের ট্যাবলেট নেই বলে জানান। বেশ কিছুক্ষন ওই কক্ষের বাহিরে অপেক্ষা করলে দেখা যায় একজন নার্স ঔষুধ সরবরাহ কক্ষ থেকে একটি খালি প্যাকেট ভরে বেশ কয়েকপদের ঔষুধ সংগ্রহ করে জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার যাচ্ছে। সেই নার্সকে অনুসরণ করে তার পিছন পিছন দ্বিতীয় তলায় যায় দৈনিক সংবাদচর্চার বিশেষ টিম এবং ঔষধগুলো কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, কিভাবে নিয়ে আসা হয়েছে জানতে চাইলে সেই নার্স উত্তেজিত হয়ে বলে আপনি কে? আপনাকে কেন বলবো? এই ঔষুধগুলো স্যারদের নির্দেশে নিয়ে আসা হয়েছে বলে তিনি জানান। এক পর্যায়ে ওই নার্স অনুসন্ধানকারী সদস্যকে রুমের বাহিরে যেতে বলে এবং তিনি ঔষধ ভর্তী ব্যাগটি আলমারীতে রেখে দেন ও ভেতর থেকে দরজাটি লাগিয়ে দেন। পরবর্তীতে অনেকবার সেই নার্সকে দরজা খোলার জন্য বললে তিনি সেই সকল কথার কোন প্রকার কর্ণপাত না করে দীর্ঘ ৫ মিনিট পর দরজা খুলেন। দরজা খোলার পর দেখা যায় সেই নার্সের প্যাকেট ভর্তি ঔষুধগুলো মধ্যে থেকে অনেকগুলো ট্যাবলেটের পাতা গায়েব হয়ে যায়। অনুসন্ধানকারী দলের তুমুল জেরার মুখে পড়ে এক পর্যায়ে সেই নার্স বলে, ভাই আমার বোনের ক্যান্সার হয়েছে, তার জন্যই এসকল ঔষুধ নিয়েছি।

ঔষুধ চুরির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের আরএমও আসাদুজ্জামানের সাথে যোগাযাগ করলে তিনি বলেন, গত ৫ মে (রবিবার) এর ঘটনা সম্পর্কে আমি অবগত রয়েছি। আপনাদের তথ্য ভুল। যার বিরুদ্ধে ঔষুধ চুরির অভিযোগ উঠেছে প্রকৃতপক্ষে সে ঔষুধ চুরি করে নি। সেই নার্স যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে টিকিট কেটে ঔষুধ সংগ্রহ করেছে। অবৈধ পন্থায় ঔষুদ নেওয়ার সময় এবং দৈনিক সংবাদচর্চার অনুসন্ধানকারী দল সেই নার্সকে হাতে নাতে ধরার সময় আপনি সেই স্থানে উপস্থিত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন আমার থাকা লাগবে না, আমি জানি সে অল্প কিছু ঔষুধ নিয়েছে। সরকারি ঔষুধ সাধারণ মানুষদের জন্য, সেই ঔষুধ কি অসাধু উপায়ে হাসপাতালের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নিতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন কেন নিতে পারবে না। অবশ্যই নিতে পারবে।

উল্লেখিত ঔষুধের কারসাজির বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন বিষয়টির সম্পর্কে আমি অবগত নই। যে কোন অভিযোগ যথার্থ তদন্ত ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির অপরাধ বলা যাবে কিনা জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, কোনো ভাবেই তা করা যাবে না। অভিযোগের বিষয়টি ভালো করে তদন্ত করতে হবে তারপর এমনটা করা যাবে। তিনি এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করে বলেন ঘটনার বিষয়টি দৈনিক সংবাদচর্চার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, (আজ) সকাল ১০টায় আমি ১০০ শয্যা হাসপাতালে যাবো এবং বিষয়টি তদন্ত করবো যদি অভিযোগের বিষয়টি সঠিক হয় অবশ্যই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জের সরকারি হাসপাতাল গুলোতে ঔষুধ চুরির সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত ডাক্তারদের নার্সদের বিচার চায় নারায়ণগঞ্জ বাসি।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ